সাধারণত সুপারহিরো সিনেমা তৈরি হয় আগে প্রকাশিত কমিক্স এর উপর আধার করে। সুপারহিরো কমিক্সের ইতিহাস ঘাঁটলে যেটা বোঝা যায় সুপারহিরোদের উৎপত্তিই হয়েছিল, সেই সময়ের সামাজিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো (অ)সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার কাহিনীর মাধ্যমে, সমাজকে সেই অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসার অনুপ্রেরণা জোগানো। 1939 এ সুপারম্যান কমিক্স থেকে তার শুরু। কমিক্স কে সিনেমা তে আনার শুরু তার পরে পরেই। 1941 এ 'দা এডভেঞ্চারস অফ ক্যাপ্টেন মার্ভেল' বানায় হলিউডের রিপাবলিক পিকচা2র। কিন্তু সমস্যা ছিল স্পেশাল এফেক্ট কে মোশান পিকচারে জীবন্ত করে তোলা। সেটা প্রাণ পায় সিজিআই এর হাত ধরে একবিংশ শতাব্দীতে। শুরুটা ডিসি কমিক্সের হলেও বর্তমান সময়ের সম্রাট বলতে মার্ভেল কমিক্স বললে সেটা এক ফোঁটাও অত্যুক্তি হবে না। তো এই কমিক্স আধারিত সিনেমার ইতিহাসে সবথেকে শক্তিশালী দৃশ্য গুলো নিয়েই আমার ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
মুক্তি- 2005, টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স।
পোস্টার: https://fanart.tv/fanart/movies/1979/movieposter/fantastic-four-rise-of-the-silver-surfer-5506183189a99.jpgআমার প্রচন্ড পছন্দের সিনেমা। বিষয়বস্তু হলো গ্রহ ধ্বংসকারী গ্যালাকটাস পৃথিবীতে আসছে। তার আগে পাঠিয়েছে তার দূত সিলভার সার্ফারকে। আগেই সিলভার সার্ফারের গ্রহ ধ্বংস করতে গেছিল সে। নিজের দাসত্বের বিনিময়ে নিজের গ্রহ কে বাঁচিয়ে গ্যালাকটাসকে অন্য গ্রহ খুঁজে দেওয়াই তার কাজ। ফ্যান্টাস্টিক ফোর হলো, রিড রিচার্ডস (ইলাস্টিক ম্যান), সুজন স্ট্রম (ইনভিসিবল উইম্যান), জনি স্ট্রম (হিউম্যান টর্চ) ও বেঞ্জামিন গ্রীম (থিঙ)। এদের সাথে ডক্টর ভিক্টর ভন ডুম যে কিনা আদতে ভিলেন, মিলে সিলভার সার্ফারকে পৃথিবীতে আটক করে। সুজন স্ট্রম সিলভার সার্ফারের সাথে কথা শুরু করে।
দৃশ্য 1: তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এক সময় সুজান কে নিজের গল্প বলতে শুরু করে সিলভার। জানায় যে তার আর কোনো বিকল্প ছিল না গ্যালাকটাসকে সাহায্য করা ছাড়া। তখন ই সুজান সিলভার কে বলে,"বিকল্প রাস্তা অনেক থাকে, শুধু নিজের উদ্দেশ্য ঠিক হওয়া চাই"। এই একটা কথা বদলে দেয় সিলভার কে। সিনেমার শেষ দিকে সিলভারের সার্ফবোর্ড চুরি করে তাই দিয়ে পাওয়া ক্ষমতার জেরে আহত সিলভার কে আঘাত করতে যায় ডক্টর ডুম। সুজান নিজের মানসিক শক্তি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে সেই শক্তিশেল কে। সুজনের মধ্যে দিয়ে ঢুকে যায় তা। প্রায় মারা পরে সুজান স্ট্রম। এদিকে সম্মিলিত ফ্যান্টাস্টিক ফোরের আঘাতে ছিটকে পড়ে ডক্টর ডুমের কাছে থাকা সার্ফবোর্ড। নিজের সার্ফবোর্ড ফিরে পেয়ে যায় সিলভার। প্রায়মৃত সুজান কে কোলে নিয়ে কাঁদছে তার স্বামী রিড। তাদের কাছে এসে দাঁড়ায় সিলভার। নিজের মহাজাগতিক শক্তি দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসে সুজান কে মৃত্যুর কাছ থেকে। ওদিকে গ্যালাকটাসের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে প্রবল ভাবে। নিজের কাজ ঠিক করে নেয় সিলভার।
দৃশ্য:2, রিড কে বলে "নিজের বাকি জীবনের সব সুন্দর মুহুর্ত সুজনের সাথে কাটিও। আর ও কে বোলো ও ঠিক বলেছিল। বিকল্প অনেক থাকে।"
উঠে দাঁড়ায় সিলভার। সার্ফবোর্ড উঠে এগিয়ে যায় সেই মহাধ্বংসকারী গ্যালাকটাসের দিকে। এদিকে আসতে আসতে চোখ খোলে সুজান। রিডের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। গ্যালাকটাসের মূল কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যায় সে। কিন্তু পারছে না ঠিক করে। মুহুর্মুহু এগিয়ে আসছে বিভিন্ন গ্রহাণু, আগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পাথর।
দৃশ্য:3, হটাৎ করে সার্ফবোর্ডর পিছনে কাউকে অনুভব করে সিলভার। সার্ফবোর্ডকে আরো ক্ষমতা দিতে তাকে ঠেলতে এগিয়ে এসেছে জনি। হিউম্যান টর্চ। এগিয়ে যাচ্ছে তারা গ্যালাকটাসের কেন্দ্রর দিকে। বেশিদূর পারলো না জনি। কিন্তু যেটুকু দিলো তাই যথেষ্ট।
দৃশ্য:4, "আমি আর তোমার দাস নই। এটাই শেষ। আমাদের দুজনের"। নিজের সমগ্র শক্তি কে এক জায়গায় এনে নিজের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে ও গ্যালাকটাসকে শেষ করে দিলো সিলভার সার্ফার।
"বিকল্প রাস্তা অনেক থাকে" শুধু এই একটা কথা বদলে দিয়েছিল সেই মহান পথিককে, যে বহুযুগ ধরে জানতো তার রাস্তাই একমাত্র রাস্তা। নিজেকে শেষ করে প্রমান করে দিয়ে গেল নিজের উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে রাস্তা সত্যিই অনেক থাকে।
Image Copyrighted to respective owner of the movie. Screenshot is taken for review purposes.
ফেসবুকে প্রকাশিত 09.10.2021
মুক্তি- 2003, টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স।
পোস্টার: https://en.wikipedia.org/wiki/X2_(film)#/media/File:X2_poster.jpgএক্স টু, বা এক্স মেন ইউনাইটেড, এক্স-মেন ইউনিভার্সের দ্বিতীয় সিনেমা। দুহাজার সালে মুক্তি পাওয়া এক্স-মেন সিনেমার ডাইরেক্ট সিকুয়েল এই গল্পটা। প্রথম গল্পে প্রফেসর জেভিয়ারের সাথে ম্যাগনেটোর প্রথম লড়াই শেষ হওয়ার পরে ম্যাগনেটো হাই সিকিউরিটি জেলে বন্দী। গল্পের শুরুতে টেলিপোর্ট করার ক্ষমতা থাকা নাইটক্রলার, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করে জখম হয়। এদিকে লোগান নিজের মুছে যাওয়া ইতিহাস খুঁজতে বরফে ঢাকা কানাডার প্রান্তরে একটা মিলিটারি রিসার্চ সেন্টারে পৌঁছায়, যেখানে কিছুই খুঁজে পায় না। প্রফেসর জেভিয়ারের টিমের অন্যতম সদস্য জিন গ্রে যার মিউট্যান্ট ক্ষমতা অনেকটা জেভিয়ারের মতনই, সে নিজের ক্ষমতাকে কন্ট্রোল করতে প্রচন্ড বেগ পাচ্ছে, এরকম অবস্থায় গল্পের শুরু।
গল্পে ভিলেন হয়ে আসে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম স্ট্রাইকার। প্রফেসর জেভিয়ার আর জিন গ্রে'র মতন ওর ছেলেও মানুষের মন পড়তে পারে, তাকে কন্ট্রোল করতে পারে। প্রেসিডেন্টের উপর হওয়া আক্রমণকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রফেসর জেভিয়ারের স্কুলে মিলিটারি অভিযান চালিয়ে সাইক্লপ আর প্রফেসর জেভিয়ারকে কিডন্যাপ করে অজানা জায়গায় নিয়ে চলে যায়।
এদিকে নিজের আকার বদলে ফেলতে সক্ষম মিষ্টিক ম্যাগনেটোকে জেল থেকে উদ্ধার করে, তারপর ম্যাগনেটোর দল আর প্রফেসর জেভিয়ারের বাকি ছাত্ররা একজোট হয়, ওদের উদ্ধারের জন্য।
ম্যাগনেটো জানায়, যে স্ট্রাইকার জেভিয়ারকে আটকে রেখে সমস্ত মিউট্যান্টকে শেষ করার একটা চেষ্টা করছে নতুন একটা সেরিব্রো বানিয়ে, আর সেটা কানাডার প্রান্তরে ওই মিলিটারি রিসার্চ সেন্টারেই।
নিজেদের বিমান এক্স-জেটে করে ওরা পৌঁছায় বরফে ঢেকে থাকা পরিত্যক্ত সেন্টারটাতে। ওখানে গিয়ে বুঝতে পারে ওর নিচে একটা ড্যামের মধ্যে স্ট্রাইকার সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। হিরো ভিলেন ফাইট হয়, সবাইকে উদ্ধার করে পুরো টিম প্লেনে গিয়ে বসে কিন্তু প্লেন উড়তে পারে না। প্লেনের নিচে থাকা বরফের প্রান্তর তখন ভেঙে পড়ছে কারণ নিচের ড্যাম তখন ভেঙে পড়েছে, প্রবল জলের বেগ আর একটু হলেই ডুবিয়ে দেবে প্লেন আর প্লেনে থাকা সমস্ত মিউট্যান্টকে।
প্রধান দৃশ্য : হটাৎ করেই প্লেন থেকে নেমে পড়লো জিন। ভেঙে পড়া বরফের প্রান্তরে একটা দাঁড়াবার জায়গা পেয়ে নিজের টেলিকাইনেটিক ক্ষমতা দিয়ে আটকে দিলো জলের স্রোতকে। ওপর দিকে ওই ক্ষমতা ব্যাবহার করে প্লেনকে উড়তে দিলো। প্রবল জলের স্রোতকে আটকানো আর একটা জেট প্লেনকে উড়ানো, এই দুটো কাজ নিজের ক্ষমতার একদম শেষ বিন্দুতে নিয়ে চলে গেল জিন গ্রে'কে। প্লেনে বসে থাকা জিনের প্রেমিক সাইক্লপ তখন পাগলের মতন ছটফট করছে। নিজের ক্ষমতা দিয়েই সবাইকে শেষ বিদায় জানালো জিন। শরীরের সমস্ত ক্ষমতাকে একজোট করে উড়িয়ে দিলো এক্স-জেটকে, তারপর জলের স্রোত এসে লেকের তলায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল জিনকে।
প্রিয়জনকে বাঁচানোর জন্য জিনের আত্মবলিদান পরবর্তীতে সুপারহিরো সিনেমাগুলোর অন্যতম প্রধান দৃশ্য হয়ে থাকবে, তাই পায়ওনিয়ার হিসাবে এই দৃশ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
Image Copyrighted to respective owner of the movie. Screenshot is taken for review purposes.
ফেসবুকে প্রকাশিত 29.04.2023